ব্যাপন

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - পদার্থের অবস্থা | | NCTB BOOK
6

কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয় পদার্থ উচ্চ ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানের দিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন: ঘরের এক কোণে কোনো একটি সুগন্ধির শিশির মুখ খুলে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে সারা ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদাহরণ। কোনো পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে সময় কম লাগলে ঐ পদার্থের ব্যাপন হার বেশি এবং কোনো পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগলে ঐ পদার্থের ব্যাপন হার কম। নিচের পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা নিতে পারবে।

 

 

একক কাজ

পরীক্ষা নং: 1
কক্ষ তাপমাত্রায় একটি কাচের পাত্রে কিছু বিশুদ্ধ পানি নাও। এ পানিতে সামান্য গোলাপি বর্ণের কঠিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO) ছেড়ে দাও। কী লক্ষ করলে? কিছুক্ষণ পর দেখবে KMnO, দানাগুলো দ্রবীভূত হয়ে গোলাপি দ্রবণে পরিণত হচ্ছে। এক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের কণাগুলো একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে গতিশক্তি অর্জন করে এবং পানির মাঝে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বেশ কিছু সময় পর পুরো পাত্রেই গোলাপি রং ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে পানিতে তথা তরল মাধ্যমে কঠিন পদার্থ (KMnO2) বাপিত হয়েছে। তরলে কঠিন পদার্থের ব্যাপনের হার অনেক কম হয়। এক্ষেত্রে তাপ প্রদান করলে ব্যাপন হার বেশি হয়।

একইভাবে যদি গরম পানিতে KMnO এর ব্যাপনের পরীক্ষাটি সম্পন্ন করি তবে দেখা যাবে ঠাণ্ডা পানির চেয়ে গরম পানিতে KMnO, কণাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সমর্থ পানিকে গোলাপি বর্ণে পরিণত করছে। কারণ গরম পানি থেকে KMnO4 কণাগুলো তাপ গ্রহণ করে অধিক গতিশক্তি প্রাপ্ত হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ ভাগ প্রয়োগ করলে কঠিন পদার্থের ব্যাপন হার বৃদ্ধি পায় ।

 

 

 

একক কাজ
পরীক্ষা নং: 2
কক্ষ তাপমাত্রার একটি বিকারে কিছু পরিমাপ বিশুদ্ধ পানি নিয়ে এতে সামান্য পরিমাণ তরল নীলের প্রবণ যোগ করো। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবে বিকারের সমস্ত পানির রং নীল হয়ে গেছে। অর্থাৎ নীলের প্রবলের কণাগুলো সমস্ত পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে পানিতে তরল পদার্থ (নীলের দ্রবণ) ব্যাপিত হয়েছে। কক্ষ তাপমাত্রায় কঠিন KMnO এর ব্যাপনের চেয়ে তরল নীলের দ্রবণের ব্যাপনের সময় অনেক কম লেগেছে। অর্থাৎ তরল মাধ্যমে কঠিন পদার্থের ব্যাপন হার- এর চেয়ে তরল মাধ্যমে তরল পদার্থের ব্যাপন হার বেশি। তাপের প্রভাবে এই ব্যাপন হার আরও বেশি হয়। কক্ষ তাপমাত্রায় বা গরম অবস্থায় তরুণ মাধ্যমে গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন হার সবচেয়ে বেশি হয়।

 

একক কাজ

পরীক্ষা নং: 3

দুটি গ্যাসের ব্যাপন
দুই মুখ খোলা একটি লম্বা কাচনল নাও। দুই খণ্ড তুলা নাও। এক খণ্ড তুলাকে ঘন হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) শ্রবণে ভিজাও এবং অপর খন্ড তুলা অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH, OH) দ্রবণে ভিজাও। এবার ঐ লম্বা কাচনলটির এক মুখে হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবণে সিন্তু তুলা এবং অপর মুখে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড প্রবশে সিদ্ধ তুলা দিয়ে বন্ধ করো। এখানে হাইড্রোক্লোরিক এসিড প্রবণ থেকে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস এবং অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড প্রবণ থেকে অ্যামোনিয়া (NH3) প্যাস ব্যাপিত হবে।

কিছুক্ষণের মধ্যে দেখতে পাবে কাচনলের ভিতরে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস ও অ্যামোনিয়া গ্যাস পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের (NH, CI) সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করেছে। সাদা ধোঁয়ার অবস্থান কাচনলের ঠিক মাঝামাঝি হবে না। এটি হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবণের কাছে এবং অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণ থেকে দূরে অবস্থান করবে। অর্থাৎ একই সময়ে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস কম দূরত্ব এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এ পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে, অ্যামোনিয়া গ্যাস হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করছে অর্থাৎ অ্যামোনিয়া গ্যাসের ব্যাপন হার হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের ব্যাপন হারের চেয়ে বেশি। এর কারণ মূলত এদের আণবিক ভর। যে গ্যাসের আণবিক ভর যত কম তার ব্যাপন হার তত বেশি। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের আণবিক ভর হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের আণবিক ভরের চেয়ে কম। তাই NH, গ্যাস HCl গ্যাসের চেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। (NH, গ্যাসের আণবিক ভর 17 এবং HCl গ্যাসের আণবিক ভর 36.5) H, He, N2, O2 এবং CO2 গ্যাসগুলোর আণবিক ভর যথাক্রমে 2, 4, 28, 32 এবং 44। এই গ্যাসগুলোর মধ্যে H2 এর আণবিক ভর কম। তাই H2 এর ব্যাপন হার বেশি হবে এবং CO2 এর আণবিক ভর বেশি, কাজেই CO2 এর ব্যাপন হার কম হবে।

 

Content added || updated By
Promotion